শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার নারী পর্যটকের জবানবন্দি গ্রহণ করেছে আদালত। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে হাজির করে জবানবন্দি গ্রহন করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিন জানান, মামলার নিয়মানুযায়ী ধর্ষিতা নারীকে আদালত আনা হয়। এসময় সে আদালতে জবানবন্দি দেন। এর আগে দুপুর ২টার সময় ওই নারী ও তাঁর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ। বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেফাজতে রয়েছে ওই পর্যটক দম্পতি।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘আলোচিত এই মামলাটি ভিকটিমের অভিযোগ, আদালতের জবানবন্দি, মেডিকেল রিপোর্ট, সাক্ষীদের সাক্ষ্য সহ যাবতীয় বিষয় গুরুত্ব সহকারে ট্যুরিস্ট পুলিশ তদন্ত করছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি।’
ক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনে অনেক অপরাধী রয়েছে স্বীকার করে পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, ‘কলাতলী হোটেল জোনে কেউ মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত, আবার কেউ দালালী ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত। আমরা সবগুলো বিষয় নিয়ে এগুচ্ছি। আসামী আশিকুল ইসলাম আশিকের সাথে কারা জড়িত, তার আয়ের উৎসব কি এবং কার ইন্ধনে এসব কর্মকান্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এদিকে শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ থেকে সভা শেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংকালে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো: জিল্লুর রহমান দাবি করছেন, কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসা নারী পর্যটক ধর্ষণ মামলায় গত তিন দিনেও কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে মামলাটির তদন্ত প্রাথমিকভাবে দ্রুত এগুচ্ছে। পুলিশ বলছে, কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসা ধর্ষিণের অভিযোগে অভিযুক্ত নারীর সঙ্গে আসামী আশিকুল ইসলাম আশিকের পুর্বপরিচিত বলে দাবি করছেন পুলিশ। এমনকি ওই নারী গত তিন মাস ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছিলেন।
মো: জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজারে আলোচিত নারী পর্যটক ধর্ষণ মামলাটি থানায় রুজু হওয়ার পর তদন্ত করে করার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশকে দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ট্যুরিস্ট পুলিশ ভিকটিম নারীকে মেডিকেল রিপোর্ট সহ নানা প্রয়োজনীয় কাজ ইতিমধ্যে কাজ গুলো সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আসামীদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মো: জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। বিশেষ করে ওইদিন রাতে ভিকটিম নারী আসামী আশিকুল ইসলাম শাকিলের মোটরবাইকের পিছনে বসে হোটেল জিয়া গেস্ট ইন-এ যান। এসময় অসংখ্য লোকজন ছিল। কিন্তু, ভিকটিম নারী কোন ধরণের চিৎকার বা উচু বাক্য করেননি। আমরা চাই মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে আসল ঘটনা উৎঘাটিত হউক এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত হউক। ’
ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত আশিকুল ইসলাম আশিকের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণসহ ১৬টি মামলার কথা উল্লেখ করে মো: জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ আসামী আশিক গত ১৬ ডিসেম্বর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। ছাড়া পাওয়ার পরপরই তার সেই পূর্বে অপরাধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভিকটিমকে যখন আসামী আশিক নিয়ে যান, তখন ভিকটিম তার ব্যক্তিগত কাছে শহরের চিটাগাং হোটেলে অবস্থান করছিলেন। এসময় তার স্বামী ছিল অন্য একটি হোটেলে। তবে আসামী আশিক ওই নারীর স্বামীর কাছ থেকে চাঁদার হুমকি দেন বলে ভিকটিম পুলিশকে জানিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর রাতে স্বামী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসা ধর্ষণের শিকার হন নারী পর্যটক। ধর্ষণের শিকার নারীর ভাষ্য, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে ওইদিন সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছেন। উঠেন শহরের হলিডে সী-ল্যান্ডের ২০১নং কক্ষে। ওই দিন বিকালে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে লাবণি বিচে যান। রাতে হোটেলে ফেরার পথে এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে। এতে স্বামীর সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে ওই যুবক। বাধা দিলে তার সঙ্গেও তর্কে জড়ায় যুবক। ওই সময় আরও দুই যুবক ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয়। তারা স্বামী-সন্তানকে ইজিবাইকে তুলে দিয়ে ওই নারীকে আলাদা করে ফেলে। পরে ওই এলাকার একটি ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে তিন জনে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর স্বামী-সন্তানকে হত্যার ভয় দেখিয়ে শহরের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে নিয়ে যায়।
এদিকে পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত আশিকুল ইসলাম আশিকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন, ছিনতাই, ইয়াবা ব্যবসাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৬টি মামলা আছে। তার অন্যতম সহযোগী জয়ার বিরুদ্ধেও দুটি মামলা আছে। তারা মূলত কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনের ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তাদের গ্যাংয়ে অর্ধশতাধিক সদস্য রয়েছেন। তারা গ্রেপ্তারও হয়েছেন একাধিকবার।
ভয়েস/আআ